ব্রণ বা পিম্পল একটি খুব সাধারণ ত্বকের সমস্যা যা কম বেশিসবাই কখনও না কখনও সম্মুখীন হয়েছি। বয়ঃসন্ধির সময় ব্রণসাধারণত হয়ে থাকে। ছেলে ও মেয়েদের সমানভাবেই হয়ে থাকে। ছেলেদের ক্ষেত্রে অনেকসময় বাড়াবাড়ি বেশি হয়, কিন্তু মেয়েদেরক্ষেত্রে বেশিদিন থাকতে পারে। সাধারণত ২৫ বছর বয়সের পরব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। ব্রণ এই বয়সে মানসিক চাপ ও ডিপ্রেশন-এর কারণ হয়ে ওঠে।
ব্রণ কেন হয়
আমাদের শরীরে বয়ঃসন্ধিকালে হরমােনের অভাবে সিবেসিয়াস গ্রন্থি থেকে সিবাম নিঃসৃত হয় ও সিবেসিয়াস ফলিক-এর কেরাটিন-এর হাইপারকেরাটোসিস হয় তাতে সিবাম বাইরে বেরােতে পারে না ও সেখানে প্রােপিওনিব্যাকটেরিয়াম অ্যাকনি নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে। ত্বকের ওপর ফ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ও লাইপেজ এনজাইম বেড়ে যায় যা প্রদাহ সৃষ্টি করে। সেটাই ব্ৰণতে পরিণত হয়।
ব্রণ-এর লক্ষণগুলি কী কী
ব্রণ কমেজেন (কালাে ও সাদা), দানা,পাস্তুল, নােডুল বা সিস্ট তৈরি করে। কখনও কখনও ব্যথা বা চুলকানি থাকে। মুখে, পিঠে, বুকে ও হাতের ওপরের অংশে যেখানে সিবেসিয়াস গ্রন্থি বেশি থাকে সেখানে ব্রণ হয়।
মেয়েদের মাসিক-এর আগে বা স্ট্রেস-এর সময় ব্রণ বেশি হয়। পলিসিস্টিক ও ভারিয়ান সিন্ড্রোম (PCOS) অসুখে ব্রণ থুতনি ও গালে বেশিহয়। সাধারণত মুখে ব্রণ কমে এলে পিঠে ও বুকে ব্রণ বেশি দেখা যায়।
ব্রণ সম্বন্ধে ভ্রান্ত ধারণা কী কী?
কোষ্ঠকাঠিন্য-এ জন্য ব্রণ বাড়ে না। কিন্তু অনেকে এই ধারণা পােষণ করে। অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাওয়ার থেকে ব্রণ বাড়ে না।সুপ্তিস্থলন বা সাদা স্রাব-এর সঙ্গে ব্রণ-র কোনও সম্বন্ধ নেই। কিন্তু অনেকেই এগুলােকে ব্রণ-এর কারণ বলে ভ্রান্ত ধারণা পােষণ করে। ব্রণ কমানাের জন্য অনেকে বাজার চলতি স্টেরয়েড ক্রিম মেখে থাকে। যার ফলে ত্বকের প্রভূত ক্ষতি হয়ে থাকে; মুখে লোম , প্রদাহ, ব্রণ বেড়ে যেতে পারে।
কী কী সতর্কতা নেওয়া প্রয়ােজন
কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে বেশি মাত্রায় চিনিযুক্ত খাওয়ার (হাই গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স ফুড ) !ও অত্যাধিক ডেয়ারি প্রােডাক্ট থেকে ব্রণ বাড়তে পারে। তাই এগুলি এড়িয়ে চলা ভালাে।
মহিলাদের ক্ষেত্রে মুখে প্রসাধনী সামগ্রী বিশেষত তৈলাক্ত ক্রিম বা ফাউন্ডেশন ব্যবহার পরিহার করতে হবে।মুখ সারাদিনে দু-তিনবার ধােয়া যেতে পারে ক্লিনজার পরিত্যাগ করতে হবে। বেশিবার মুখ ধুলে মুখের ত্বকে ক্ষতি হতে পারে।স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তা কম রাখতে হবে। অবসর সময়ে অনেকে ব্রণ খুঁটে ফেলে। এর ফলে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও স্কার ও দানার সৃষ্টি হয়। তাই এই অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
ব্রণ-র প্রকারভেদ
১) নিওনেটাল অ্যাকনি (Neonatal acne)
বাচ্চা জন্মের পর মায়ের হরমােনের প্রভাবে নাকে ও গালে কমেডােন (comedone) দেখা যায়। যা ২-৪ সপ্তাহ বাদে সেরে যায়।
২) ড্রাগ অ্যাকনি (Drug acne)
মুখে স্টেরয়েড গ্রুপের ক্রিম ব্যবহার করলে ব্রণ দেখা যায়। আয়ােডাইড, ব্রোমাইড, লিথিয়াম, স্টেরয়েড ট্যাবলেট সেবনেও ব্রণ দেখা যেতে পারে।
৩) (Occupational acne)
কিছু ক্ষেত্রে শিল্প ক্ষেত্রে কাজ করা ব্যক্তিদের চার (কালচার),কাটিং ওয়েল, ক্লোরিনেটেড হাইড্রোকার্বন-এর ব্যবহারে ব্রণ হয় যা সাধারণত শরীরে ঢাকা অংশে পিটে দেখা যায়।
৪) ট্রপিকাল অ্যাকনি
ট্রপিকাল আদ্রর্তায় এক ধরনের ব্রণ হয় যা সাধারণত পিঠে ও নিতম্বে হয়।
৫) কসমেটিক অ্যাকনি
কসমেটিক প্রােডাক্ট থেকে হয়।
ব্রণ-র চিকিৎসা কি ?
ব্রণ-র চিকিৎসা ব্রণ-র চিকিৎসায় আমরা ক্রিম বা ট্রপিকাল মেডিসিন খাওয়ার ওষুধ বা প্রয়ােজনে এর কম্বিনেশন ব্যবহার করে থাকি :-
১) টেট্রাসাইক্লিন, ডক্সিসাইক্লিন, মিনােসাইক্লিন
২) ক্লিনডামাইসিন জেল, ডাপনে জেল
৩) বেনজয়েল পারক্সাইড ক্রিম
৪) রেটিনােয়িক অ্যাসিড ওরাল ও ট্রপিকাল।
৫) অ্যাজেলেয়িক অ্যাসিড জেল।
তবে মাতৃত্বকালীন অবস্থায় ও ব্রেস্টফিডিং-এর সময় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। কিছু ক্ষেত্রে কমেডােন এক্সট্রাক্সন (Comedone extraction), কেমিক্যাল পিলিং ও সার্জিকাল প্রসিডিওর-এর মাধ্যমে ব্রণ, গর্ত বা স্কার ও দাগের চিকিৎসা করা হয়। PCOS-এর চিকিৎসায় ত্বক হরমােন-এর ও স্ত্রীরােগ বিশেষজ্ঞ-এর পরামর্শ প্রয়ােজন হয়।